সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করা

#গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করা
১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,

قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿162﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ (الأنعام: 162-163)

‘‘আপনি বলুন, ‘‘আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ [সবই] আল্লাহ রাববুল আলামীনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, যার কোন শরিক নেই’’ (আনআম : ১৬২)

২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴿2﴾ (الكوثر: 2)

‘‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানী করুন। (আল-কাউসারঃ ২)

৩। আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে, তিনি বলেছেন, ‘‘রাসূল (স:) চারটি বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছেন,

(ক) لعن الله من ذبح لغير الله

‘‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে (পশু) যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা’নত।’’

(খ) لعن الله من لعن والديه

‘‘যে ব্যক্তি নিজ পিতা- মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত।’’

(গ) لعن الله من آوى محدثا

‘‘যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত।’’

(ঘ) لعن الله من غير منار الأرض

‘‘যে ব্যক্তি জমির সীমানা [চিহ্ণ] পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লা’নত’’। (মুসলিম)

৪। তারিক বিন শিহাব কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন :

    دخل الجنة رجل فى ذباب ودخل النار رجل فى ذباب قالوا وكيف ذلك يا رسول الله قال: مر رجلان على قوم لهم صنم لا يجوزه أحد حتى يقرب له شيئا فقالوا لاحدهما : قرب قال: ليس عندي شئ أقرب، قالوا له: قرب ولو ذباب فقرب ذباب فخلوا سبيله فدخل النار، وقالوا للآخر: قرب، قال ما كنت أقرب شيئا دون الله عز وجل فضربوا عنقه فدخل الجنة. (رواه احمد)

‘‘এক ব্যক্তি একটি মাছির ব্যাপারে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর এক ব্যক্তি একটি মাছির ব্যাপারে জাহান্নামে গিয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এমনটি কিভাবে হলো? তিনি বললেন, ‘দু’জন লোক এমন একটি কওমের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল যার জন্য একটি মূর্তি নির্ধারিত ছিল। উক্ত মূর্তিকে কোন কিছু নযরানা বা উপহার না দিয়ে কেউ সে স্থান অতিক্রম করতোনা। উক্ত কওমের লোকেরা দু’জনের একজনকে বললো, ‘মূর্তির জন্য তুমি কিছু নযরানা পেশ করো’। সে বললো,

‘নযরানা দেয়ার মত আমার কাছে কিছুই নেই’ তারা বললো, ‘অন্ততঃ একটা মাছি হলেও নযরানা স্বরূপ দিয়ে যাও’। অতঃপর সে একটা মাছি মূর্তিকে উপহার দিলো। তারাও লোকটির পথ ছেড়ে দিলো। এর ফলে মৃত্যুর পর সে জাহান্নামে গেলো। অপর ব্যক্তিকে তারা বললো, ‘‘মূর্তিকে তুমিও কিছু নযরানা দিয়ে যাও। সে বললো, ‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য আমি কাউকে কোন নযরানা দেইনা’ এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিলো। [শিরক থেকে বিরত থাকার কারণে] মৃত্যুর পর সে জান্নাতে প্রবেশ করলো।’’ (আহমদ)

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায়ঃ

১। قل إن صلاتي ونسكي এর তাফসীর।

২। فصل لربك وانحر এর তাফসীর।

৩। প্রথম অভিশপ্ত ব্যক্তি হচ্ছে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু যবেহকারী।

৪। যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। এরমধ্যে এ কথাও নিহিত আছে যে তুমি কোন ব্যক্তির পিতা- মাতাকে অভিশাপ দিলে সেও তোমার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দিবে।

৫। যে ব্যক্তি বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। বিদআতী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় আবিস্কার

বা উদ্ভাবন করে, যাতে আল্লাহর হক ওয়াজিব হয়ে যায়। এর ফলে সে এমন ব্যক্তির আশ্রয় চায় যে তাকে উক্ত বিষয়ের দোষ ত্রুটি বা অশুভ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

৬। যে ব্যক্তি জমির সীমানা বা চিহ্ণ পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লা’নত। এটা এমন চিহ্ণিত সীমানা যা তোমার এবং তোমার প্রতিবেশীর জমির অধিকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। এটা পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে, তার নির্ধারিত স্থান থেকে সীমানা এগিয়ে আনা অথবা পিছনে নিয়ে যাওয়া।

৭। নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর লা’নত এবং সাধারণভাবে পাপীদের উপর লা’নতের মধ্যে পার্থক্য।

৮। এ গুরুত্বপূর্ণ কাহিনীটি মাছির কাহিনী হিসেবে পরিচিত।

৯। তার জাহান্নামে প্রবশে করার কারণ হচ্ছে ঐ মাছি, যা নযরানা হিসেবে মূর্তিকে দেয়ার কোন ইচ্ছা না থাকা সত্বেও কওমের অনিষ্টতা হতে বাঁচার উদ্দেশ্যেই সে [মাছিটি নযরানা হিসেবে মূর্তিকে দিয়ে শিরকী] কাজটি করেছে।

১০। মোমিনের অন্তরে শিরকের [মারাত্মক ও ক্ষতিকর] অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ। নিহত [জান্নাতী] ব্যক্তি নিহত হওয়ার ব্যাপারে কি ভাবে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের দাবীর কাছে সে মাথা নত করেনি। অথচ তারা তার কাছে কেলমাত্র বাহ্যিক আমল ছাড়া আর কিছুই দাবী করেনি।

১১। যে ব্যক্তি জাহান্নামে গিয়েছে সে একজন মুসলমান। কারণ সে যদি কাফের হতো তাহলে এ কথা বলা হতোনা دخل النار فى ذباب একটি মাছির ব্যাপারে সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। [অর্থাৎ মাছি সংক্রান্ত শিরকী ঘটনার পূর্বে সে জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য ছিল]

১২। এতে সেই সহীহ হাদিসের পক্ষে সাক্ষ্য পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে, الجنة اقرب إلى أجدكم من شراك نعله والنار مثل ذلك

‘‘জান্নাত তোমাদের কোন ব্যক্তির কাছে তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটবর্তী। জাহান্নামও তদ্রুপ নিকটবর্তী।’’

১৩। এটা জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, অন্তরের আমলই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। এমনকি মূর্তি পূজারীদের কাছেও এ কথা স্বীকৃত।

https://www.facebook.com/Salafe19/

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর।

##সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর। ১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ. (البقرة: 165) ‘‘মানুষের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে সদৃশ স্থির করে, আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে।’’। (বাকারা : ১৬৫) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ (التوبة: 24) ‘‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, ‘যদি তোমাদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, তোমাদের স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ঐ ব্যবসা যার লোকসান হওয়াকে তোমরা অপছন্দ করো, তোমাদের পছন্দনীয় বাড়ী-ঘর, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁরই পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’’ (তাওবা : ২৪) ৩। সাহাব...

নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু

#নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু ১। সাহাবী জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বললেন, هى من عمل الشيطان. (رواه أحمد و أبوداود) ‘‘এটা হচ্ছে শয়তানের কাজ’’ (আহমাদ, আবু দাউদ) আবু দাউদ বলেন, ইমাম আহমাদ (রহ:)-কে নাশরাহ [প্রতিরোধমূলক যাদু] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর [নাশরাহর] সব কিছুই অপছন্দ করতেন।’’ সহীহ বুখারীতে কাতাদাহ (রাঃ) হ'তে বর্ণিত আছে, আমি ইবনুল মুসাইয়্যিবকে বললাম, ‘‘একজন মানুষের অসুখ হয়েছে অথবা তাকে তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, এমতাবস্থায় তার এ সমস্যার সমধান করা কিংবা প্রতিরোধমূলক যাদু [নাশরাহ] এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যাবে কি? তিনি বললেন, ‘এতে কোন দোষ নেই।’ কারণ তারা এর [নাশরাহ] দ্বারা সংশোধন ও কল্যাণ সাধন করতে চায়। যা দ্বারা মানুষের কল্যাণ ও উপকার সাধিত হয় তা নিষিদ্ধ নয়।’’ হাসান (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে তিনি বলেন, لا يحل السحر إلا الساحر ‘‘একমাত্র যাদুকর ছাড়া অন্য কেউ যাদুকে হালাল মনে করে না।’’ ইবনুল কাইয়্যিম বলে...

গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক

#গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক  ১০ - গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক ১। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ (يونس: 106-107) ‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তাকে ডেকোনা, যা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। যদি তুমি এমন কারো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।’’ (ইউনুসঃ ১০৬, ১০৭) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ (ألعنكبوت: 17) ‘‘আল্লাহর কাছে রিযিক চাও এবং তাঁরই ইবাদত করো’’। (আনকাবুত : ১৭) ৩। আল্লাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে এরশাদ করেছেন,     وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ (الأحقاف: ...