সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মাদারী সম্পর্কিত বিবরণ

##আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মাদারী সম্পর্কিত বিবরণ
১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,

وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدْتُمْ وَلَا تَنْقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا (النحل: 91)

‘‘আল্লাহর নামে যখন তোমরা কোন শক্ত ওয়াদা করো তখন তা পুরা করো এবং দৃঢ়তার সাথে কোন কসম করলে তা ভঙ্গ করোনা। (নাহর: ৯১)

২। বুরাইদাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল­াম ছোট হোক, বড়হোক [কোন যুদ্ধে] যখন সেনাবাহিনীতে কাউকে আমীর বা সেনাপতি নিযুক্ত করতেন, তখন তাকে ‘তাকওয়ার’ উপদেশ দিতেন এবং তার সাথে যে সব মুসলমান থাকতো তাদেরকেও উত্তম উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেন,

أغزوا باسم الله قاتلوا من كفر بالله أغزوا ولا تغلوا ولا تغدروا ولا تمثلوا ولاتقتلوا وليدا، وإذا لقيت عدوك من المشركين فادعهم إلى ثلاث حضال : أو خلال: فايتهن ما أجابوك فاقبل منهم وكف عنهم ثم ادعهم إلى الاسلام، فان أجابوك فاقبل منهم ، ثم أدعهم إلى التحول من دارهم إلى دار المهاجرين... إلى آخر الحديث. (رواه مسلم)

‘‘তোমরা আল্লাহর নামে যুদ্ধ করো। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো। তোমরা যুদ্ধ করো, কিন্তু বাড়াবাড়ি করোনা, বিশ্বাস ঘাতকতা করোনা। তোমরা শত্রুর নাক-কান কেটোনা বা অঙ্গ বিকৃত করোনা। তুমি যখন তোমার মুশরিক শত্রুদের মোকাবেলা করবে, তখন তিনিটি বিষয়ের দিকে তাদেরকে আহবান জানাবে। যে কোন একটি বিষয়ে তারা তোমার আহবানে সাড়া দিলে তা গ্রহণ করে নিও, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করে দিও। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করো। যদি তারা তোমার আহবানে সাড়া দেয়, তাহলে তাদেরকে গ্রহণ করে নিও। এরপর তাদেরকে তাদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে দারুল মুহাজিরীনে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য হিজরত করার জন্য আহবান জানাও। হিজরত করলে তাদেরকে একথা জানিয়ে দাও, ‘মুহাজিরদের জন্য যে অধিকার রয়েছে, তাদেরও সে অধিকার আছে, সাথে সাথে মোহাজিরদের যা করণীয় তাদেরও তাই করণীয়। আর যদি তারা হিজরতের মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদেরকে বলে দিও যে, তারা গ্রাম্য সাধারণ মুসলিম বেদুঈনদের মর্যাদা পাবে। তাদের উপর আল্লাহর হুকুম আহকাম [বিধি- নিষেধ] জারি হবে। তবে ‘গনিমত’ বা যুদ্ধ-লব্ধ অতিরিক্ত সম্পদের ভাগ তারা মুসলমানদের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ ব্যতীত পাবে না। এটাও যদি তারা অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ‘তারা কর দিতে সম্মত কিনা। যদি কর দিতে সম্মত হয়, তবে তা গ্রহণ করো, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করো। কিন্তু যদি কর দিতে তারা অস্বীকার করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।

তুমি যদি কোন দুর্গের লোকদেরকে অবরোধ করো, আর দূর্গের লোকেরা যদি তখন চায় যে, তুমি তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মায় রেখে দাও, তবে তুমি কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মায় রেখোনা বরং তোমার এবং তোমার সঙ্গী সাথীদের জিম্মায় রেখে দিও। কারণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মাদারী রক্ষা করার চেয়ে তোমার এবং তোমার- সাথীদের জিম্মাদারী রক্ষা করা অনেক সহজ। তুমি যদি কোন দূর্গের অধিবাসীদেরকে অবরোধ করো। আর তুমি আল্লাহর ফয়সালার ব্যাপারে তাদের কথায় সম্মতি দিওনা। বরং তোমার নিজের ফয়সালাতে দিও। কারণ তুমি জাননা তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালার ক্ষেত্রে তুমি সঠিক ভূমিকা নিতে পারবে কিনা।’’ (মুসলিম)

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১। আল্লাহর জিম্মা, নবীর জিম্মা এবং মোমিনদের জিম্মার মধ্যে পার্থক্য।

২। দু’টি বিষয়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বিপদজনক বিষয়টি গ্রহণ করার প্রতি দিক নির্দেশনা।

৩। আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা।

৪। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।

৬। আল্লাহর হুকুম এবং আলেমদের হুকুমের মধ্যে পার্থক্য।

৭। সাহাবী কর্তৃক প্রয়োজনের সময় এমন বিচার ফয়সালা হয়ে যাওয়া যা আল্লাহর সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা তাও তিনি জানেন না।

Facebook page

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর।

##সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর। ১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ. (البقرة: 165) ‘‘মানুষের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে সদৃশ স্থির করে, আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে।’’। (বাকারা : ১৬৫) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ (التوبة: 24) ‘‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, ‘যদি তোমাদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, তোমাদের স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ঐ ব্যবসা যার লোকসান হওয়াকে তোমরা অপছন্দ করো, তোমাদের পছন্দনীয় বাড়ী-ঘর, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁরই পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’’ (তাওবা : ২৪) ৩। সাহাব...

নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু

#নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু ১। সাহাবী জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বললেন, هى من عمل الشيطان. (رواه أحمد و أبوداود) ‘‘এটা হচ্ছে শয়তানের কাজ’’ (আহমাদ, আবু দাউদ) আবু দাউদ বলেন, ইমাম আহমাদ (রহ:)-কে নাশরাহ [প্রতিরোধমূলক যাদু] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর [নাশরাহর] সব কিছুই অপছন্দ করতেন।’’ সহীহ বুখারীতে কাতাদাহ (রাঃ) হ'তে বর্ণিত আছে, আমি ইবনুল মুসাইয়্যিবকে বললাম, ‘‘একজন মানুষের অসুখ হয়েছে অথবা তাকে তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, এমতাবস্থায় তার এ সমস্যার সমধান করা কিংবা প্রতিরোধমূলক যাদু [নাশরাহ] এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যাবে কি? তিনি বললেন, ‘এতে কোন দোষ নেই।’ কারণ তারা এর [নাশরাহ] দ্বারা সংশোধন ও কল্যাণ সাধন করতে চায়। যা দ্বারা মানুষের কল্যাণ ও উপকার সাধিত হয় তা নিষিদ্ধ নয়।’’ হাসান (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে তিনি বলেন, لا يحل السحر إلا الساحر ‘‘একমাত্র যাদুকর ছাড়া অন্য কেউ যাদুকে হালাল মনে করে না।’’ ইবনুল কাইয়্যিম বলে...

গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক

#গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক  ১০ - গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক ১। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ (يونس: 106-107) ‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তাকে ডেকোনা, যা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। যদি তুমি এমন কারো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।’’ (ইউনুসঃ ১০৬, ১০৭) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ (ألعنكبوت: 17) ‘‘আল্লাহর কাছে রিযিক চাও এবং তাঁরই ইবাদত করো’’। (আনকাবুত : ১৭) ৩। আল্লাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে এরশাদ করেছেন,     وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ (الأحقاف: ...