সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’ বলা

##‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’ বলা
১- কুতাইলা হতে বর্ণিত আছে, একজন ইহুদী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল­াম এর কাছে এসে বললো, ‘আপনারাও আল্ল­াহর সাথে শিরক করে থাকেন।’ কারণ আপনারা বলে থাকেন, ماشاءالله وشئت আল্ল­াহ এবং আপনি যা চেয়েছেন। আপনারা আরো বলে থাকেন والكعبة অর্থাৎ কাবার কসম। এরপর রাসূল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বললেন, মুসলমানদের মধ্যে যারা কসম বা হলফ করতে চায়, তারা যেন বলে ورب الكعبة ‘কাবার রবের কসম আর যেন ماشاء الله ثم شئت আল্ল­াহ যা চেয়েছেন অতঃপর আপনি যা চেয়েছেন’ একথা বলে। (নাসায়ী)

২। ইবনে আববাস রা. হতে আরো একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল­াম এর উদ্দেশ্যে বললো, ماشاء الله وشئت [আপনি এবং আল্ল­াহ যা ইচ্ছা করেছেন] তখন রাসূল সাল্ল­াল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বললেন, أجعلتنى لله ندا ‘‘তুমি কি আল্লাহর সাথে আমাকে শরিক করে ফেলেছো?’’ আসলে আল্ল­াহ যা ইচ্ছা করেছেন, তা একক ভাবেই করেছেন।

৩। আয়েশা রা. এর মায়ের দিক দিয়ে ভাই, তোফায়েল থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমি কয়েকজন ইয়াহুদীর কাছে এসেছি। আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা অবশ্যই একটা ভাল জাতি, যদি তোমরা ওযাইরকে আল্ল­াহর পুত্র না বলতে। তারা বললো, ‘তোমরাও অবশ্যই একটি ভাল জাতি যদি তোমরা ماشاء الله وشاء محمد [আল্ল­াহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মদ যা ইচ্ছা করেছেন] এ কথা না বলতে! অতঃপর নাসারাদের কিছু লোকের কাছে আমি গেলাম এবং বললাম, ‘ঈসা আ. আল্ল­াহর পুত্র’ এ কথা না বললে তোমরা একটি উত্তম জাতি হতে। তারা বললো, ‘তোমরাও ভাল জাতি হতে, যদি তোমরা এ কথা না বলতে, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মদ যা ইচ্ছা করেছেন।’ সকালে এ (স্বপ্নের) খবর যাকে পেলাম তাকে দিলাম। তারপর রাসূল সাল্ল­াল্লা­হু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম এর কাছে এলাম এবং তাকে আমার স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেন, ‘এ স্বপ্নের কথা কি আর কাউকে বলেছো?’’ বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আল্ল­াহর প্রশংসা করলেন এবং গুণ বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন, ‘‘তোফায়েল একটা স্বপ্ন দেখেছে, যার খবর তোমাদের মধ্যে যাকে বলার বলেছে। তোমরা এমন কথাই বলেছো, যা বলতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আর আমিও তোমাদেরকে এভাবে বলতে নিষেধ করছি। অতএব তোমরা ماشاء الله وشاء محمد অর্থাৎ ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মদ স. যা ইচ্ছা করেছেন’ একথা বলো না বরং তোমরা বলো, ماشاء الله وحده অর্থাৎ ‘একক আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন।’’

এ অধ্যায় থেকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো জানা যায় .

১। ছোট শিরক সম্পর্কে ইহুদীরাও অবগত আছে।

২। কুপ্রবৃত্তি সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি থাকা।

৩। রাসূল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম এর উক্তি أجعلتنى لله ندا ‘তুমি কি আমাকে আল্ল­াহর শরিক বানিয়েছো?’ [অর্থাৎ ماشاء الله وشئت এ কথা বললেই যদি শিরক হয়] তাহলে সে ব্যক্তি অবস্থা কি দাঁড়ায়, যে ব্যক্তি বলে, يا أكرم الخلق ما لي من ألوذبه سواك হে সৃষ্টির সেরা, আপনি ছাড়া আমার আশ্রয়দাতা কেউ নেই এবং [ এ কবিতাংশের] পরবর্তী দুটি লাইন। [অর্থাৎ উপরোক্ত কথা বললে অবশ্যই বড় ধরনের শিরকী গুনাহ হবে।]

৪। নবী সাল্ল­াল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম এর বাণী يمتعنى كذا وكذا দ্বারা বুঝা যায় যে, এটা শিরকে আকবার [বড় শিরক] এর অন্তর্ভূক্ত নয়।

৫। নেক স্বপ্ন অহীর শ্রেণীর্ভূক্ত।

৬। স্বপ্ন শরিয়তের কোন কোন বিধান জারির কারণ হতে পারে।

Facebook page

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর।

##সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর। ১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ. (البقرة: 165) ‘‘মানুষের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে সদৃশ স্থির করে, আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে।’’। (বাকারা : ১৬৫) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ (التوبة: 24) ‘‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, ‘যদি তোমাদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, তোমাদের স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ঐ ব্যবসা যার লোকসান হওয়াকে তোমরা অপছন্দ করো, তোমাদের পছন্দনীয় বাড়ী-ঘর, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁরই পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’’ (তাওবা : ২৪) ৩। সাহাব...

নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু

#নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু ১। সাহাবী জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বললেন, هى من عمل الشيطان. (رواه أحمد و أبوداود) ‘‘এটা হচ্ছে শয়তানের কাজ’’ (আহমাদ, আবু দাউদ) আবু দাউদ বলেন, ইমাম আহমাদ (রহ:)-কে নাশরাহ [প্রতিরোধমূলক যাদু] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর [নাশরাহর] সব কিছুই অপছন্দ করতেন।’’ সহীহ বুখারীতে কাতাদাহ (রাঃ) হ'তে বর্ণিত আছে, আমি ইবনুল মুসাইয়্যিবকে বললাম, ‘‘একজন মানুষের অসুখ হয়েছে অথবা তাকে তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, এমতাবস্থায় তার এ সমস্যার সমধান করা কিংবা প্রতিরোধমূলক যাদু [নাশরাহ] এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যাবে কি? তিনি বললেন, ‘এতে কোন দোষ নেই।’ কারণ তারা এর [নাশরাহ] দ্বারা সংশোধন ও কল্যাণ সাধন করতে চায়। যা দ্বারা মানুষের কল্যাণ ও উপকার সাধিত হয় তা নিষিদ্ধ নয়।’’ হাসান (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে তিনি বলেন, لا يحل السحر إلا الساحر ‘‘একমাত্র যাদুকর ছাড়া অন্য কেউ যাদুকে হালাল মনে করে না।’’ ইবনুল কাইয়্যিম বলে...

গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক

#গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক  ১০ - গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক ১। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ (يونس: 106-107) ‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তাকে ডেকোনা, যা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। যদি তুমি এমন কারো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।’’ (ইউনুসঃ ১০৬, ১০৭) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ (ألعنكبوت: 17) ‘‘আল্লাহর কাছে রিযিক চাও এবং তাঁরই ইবাদত করো’’। (আনকাবুত : ১৭) ৩। আল্লাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে এরশাদ করেছেন,     وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ (الأحقاف: ...