সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যেসব নামের মধ্যে গাইরুল­াহর ইবাদতের অর্থ নিহিত রয়েছে সে নাম রাখা হারাম।

##যেসব নামের মধ্যে গাইরুল­াহর ইবাদতের অর্থ নিহিত রয়েছে সে নাম রাখা হারাম।

১। আল্ল­াহ তাআলার বাণী .

فَلَمَّا آَتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا (الأعراف: 190)

‘‘অতঃপর আল্লাহ যখন উভয়কে একটি সুস্থ ও নিখূঁত সন্তান দান করলেন, তখন তারা তাঁর দানের ব্যাপারে অন্যকে তাঁর শরিক গণ্য করতে শুরু করলো।’’ (আ’রাফ . ১৯০)

ইবনে হযম (রহ:) বলেন, ঊলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, এমন প্রত্যেক নামই হারাম, যা দ্বারা গাইরুল্লাহর ইবাদত করার অর্থ বুঝায়। যেমন, আবদু ওমর, আবদুল কা’বা এবং এ জাতীয় অন্যান্য নাম। তবে আবদুল মোত্তালিব এর ব্যতিক্রম। ইবনে আববাস (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আদম আ. যখন বিবি হাওয়ার সাথে মিলিত হলেন, তখন হাওয়া গর্ভবতী হলেন। এমতাবস্থায় শয়তান আদম ও হাওয়ার কাছে এসে বললো, ‘আমি তোমাদের সেই বন্ধু ও সাথী, যে নাকী তোমাদের জান্নাত থেকে বের

করেছে। তোমরা অবশ্যই আমার আনুগত্য করো, নতুবা গর্ভস্থ সন্তানের মাথায় উটের শিং গজিয়ে দিবো, তখন সন্তান তোমার পেট কেটে বের করতে হবে। আমি অবশ্যই একাজ করে ছাড়বো।’’

শয়তান এভাবে তাদেরকে ভয় দেখাচ্ছিল। শয়তান বললো, তোমরা তোমাদের সন্তানের নাম ‘আব্দুল হারিছ’ রেখো। তখন তাঁরা শয়তানের আনুগত্য করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর তাদের একটি মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হলো। আবারো বিবি হাওয়া গর্ভবতী হলেন। শয়তানও পুনরায় তাঁদের কাছে এসে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো। এর ফলে তাঁদের অন্তরে সন্তানের প্রতি ভালবাসা তীব্র হয়ে দেখা দিলো। তখন তাঁরা সন্তানের নাম ‘আবদুল হারিস’ রাখলেন। এভাবেই তাঁরা আল্ল­াহ প্রদত্ত নেয়ামতের মধ্যে তাঁর সাথে শরিক করে ফেললেন। এটাই হচ্ছে جعلا له شركاء فيما أتاهما এ আয়াতের তাৎপর্য (ইবনে আবি হাতিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

কাতাদাহ থেকে সহীহ সনদে অপর একটি হাদীসে বর্নিত আছে, তিনি বলেন, তাঁরা আল্ল­াহর সাথে শরিক করেছিলেন আনুগত্যের ক্ষেত্রে ইবাদতের ক্ষেত্রে নয়।’

মুজাহিদ থেকে সহীহ সনদে لئن أتينا صالحا এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্নিত আছে, তিনি বলেন, সন্তানটি মানুষ না হওয়ার আশংকা তাঁরা [পিতা-মাতা] করেছিলেন। ’

[হাসান, সাঈদ প্রমুখের কাছ থেকে এর অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে।]

এ অধ্যায় থেকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১। যেসব নামের মধ্যে গাইরুল­াহর ইবাদতের অর্থ নিহিত রয়েছে সে নাম রাখা হারাম।

২। সূরা আ’রাফের ১৯০ নং আয়াতের তাফসীর।      

৩। আলোচিত অধ্যায়ে বর্ণিত শিরক হচ্ছে শুধুমাত্র নাম রাখার জন্য। এর দ্বারা হাকীকত [অর্থাৎ শিরক করা] উদ্দেশ্য ছিল না।

৪। আল্ল­াহর পক্ষ থেকে একটি নিখূঁত ও পূর্ণাঙ্গ কন্যা সন্তান লাভ করা একজন মানুষের জন্য নেয়ামতের বিষয়।

৫। আল্ল­াহর আনুগত্যের মধ্যে শিরক এবং ইবাদতের মধ্যে শিরকের ব্যাপারে সালাফে-সালেহীন পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

Facebook page

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর।

##সূরা বাকারার ১৬ নং আয়াতের তাফসীর। এবং সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর। ১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ. (البقرة: 165) ‘‘মানুষের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে সদৃশ স্থির করে, আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে।’’। (বাকারা : ১৬৫) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ (التوبة: 24) ‘‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, ‘যদি তোমাদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, তোমাদের স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ঐ ব্যবসা যার লোকসান হওয়াকে তোমরা অপছন্দ করো, তোমাদের পছন্দনীয় বাড়ী-ঘর, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁরই পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’’ (তাওবা : ২৪) ৩। সাহাব...

নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু

#নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু ১। সাহাবী জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নাশরাহ বা প্রতিরোধমূলক যাদু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বললেন, هى من عمل الشيطان. (رواه أحمد و أبوداود) ‘‘এটা হচ্ছে শয়তানের কাজ’’ (আহমাদ, আবু দাউদ) আবু দাউদ বলেন, ইমাম আহমাদ (রহ:)-কে নাশরাহ [প্রতিরোধমূলক যাদু] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর [নাশরাহর] সব কিছুই অপছন্দ করতেন।’’ সহীহ বুখারীতে কাতাদাহ (রাঃ) হ'তে বর্ণিত আছে, আমি ইবনুল মুসাইয়্যিবকে বললাম, ‘‘একজন মানুষের অসুখ হয়েছে অথবা তাকে তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, এমতাবস্থায় তার এ সমস্যার সমধান করা কিংবা প্রতিরোধমূলক যাদু [নাশরাহ] এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যাবে কি? তিনি বললেন, ‘এতে কোন দোষ নেই।’ কারণ তারা এর [নাশরাহ] দ্বারা সংশোধন ও কল্যাণ সাধন করতে চায়। যা দ্বারা মানুষের কল্যাণ ও উপকার সাধিত হয় তা নিষিদ্ধ নয়।’’ হাসান (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে তিনি বলেন, لا يحل السحر إلا الساحر ‘‘একমাত্র যাদুকর ছাড়া অন্য কেউ যাদুকে হালাল মনে করে না।’’ ইবনুল কাইয়্যিম বলে...

গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক

#গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক  ১০ - গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক ১। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ (يونس: 106-107) ‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তাকে ডেকোনা, যা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। যদি তুমি এমন কারো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।’’ (ইউনুসঃ ১০৬, ১০৭) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ (ألعنكبوت: 17) ‘‘আল্লাহর কাছে রিযিক চাও এবং তাঁরই ইবাদত করো’’। (আনকাবুত : ১৭) ৩। আল্লাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে এরশাদ করেছেন,     وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ (الأحقاف: ...